• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের নিরাপদ রুট এখন মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বড়লেখা প্রতিনিধি :

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ‘নিরাপদ’ রুট মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল ও বড়াইল সীমান্ত ১৩৬৭ নম্বর মেইন পিলার ও এর আশপাশের এলাকা। প্রায় প্রতি রাতেই রোহিঙ্গা নাগরিকরা দল বেঁধে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এদিক দিয়ে। গভীর রাত ও ভোরবেলা সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির সময় স্থানীয় লোকজন মাঝেমধ্যে তাদের আটক করে বিজিবি ও পুলিশে সোপর্দ করেন।

আবার কখনও মানবিক কারণে স্থানীয়রা তাদের ছেড়ে দেন।এরপরও এই সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ যেন ঠেকানো যাচ্ছে না। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক বিরাজ করছে।সরেজমিনে উপজেলার কুমারশাইল ও বড়াইল সীমান্ত এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই সীমান্তটি ভারত হয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ৩ থেকে ২০-৩০ জনের রোহিঙ্গা নাগরিকের দল কৌশলে বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু, কিশোরী ও তরুণী। মূলত রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে।

উদ্দেশ্য থাকে আসাম হয়ে ভারতের কোনো রাজ্যে গিয়ে চাকুরি কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে গমন। কিন্তু এর আগেই ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সীমান্ত পুলিশ রোহিঙ্গাদের কোনো কোনো দল আটক করে ফেলে। আর তখনই বিএসএফ তাদেরকে বড়লেখার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।

গত বছরের ৫ নভেম্বর উপজেলার কুমারশাইল এলাকায় সন্দেহজনক অবস্থানকালে স্থানীয়রা এক তরুণীসহ ৫ রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত প্রবেশের চেষ্টার অপরাধে পরদিন দুপুরে এদের ৪ জনকে উখিয়া থানার মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। রিয়াজ বাংগালি নামক অপর রোহিঙ্গার শরনার্থীর ক্যাম্প নিশ্চিত না হওয়ায় পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করে।

একই বছরের ২৫ আগস্ট ভোরবেলা কুমারশাইল মাদ্রাসার পাশ থেকে সন্দেহজনক চলাফেরার সময় তরুণ-তরুণীসহ ৭ রোহিঙ্গা কিশোর, কিশোরীকে স্থানীয়রা আটক করেন। পরে আটককৃতদের লাতু বিজিবি ক্যাম্পে সোপর্দ করা হয়। পরে বিজিবি তাদেরকে বড়লেখা থানা পুলিশে সোপর্দ করে।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় প্রতি রাতেই এই সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকের দল বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কুমাইরশাইল ও বড়াইল সীমান্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ রুটে পরিণত হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত। এদের সাথে কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী, অপরাধী চক্র কিংবা মাদক ব্যবসায়ি যে, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে না তার নিশ্চয়তা কোথায়।

স্থানীয় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘শাহবাজপুর সীমান্ত দিয়ে প্রায়ই রাতের বেলা দল বেঁধে রোহিঙ্গারা ঢুকছে। ওই এলাকাটা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এনিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে জনমনে আতঙ্ক ও সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় জুলাই মাসের উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেছি। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘গত বুধবার (৩০ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমারশাইল সীমান্ত দিয়ে ৩ জন অজ্ঞাত পুরুষ পুশব্যাক হয় বলে স্থানীয়রা জানান। কাকড়ি ব্রিজ এলাকায় লোকজন তাদের আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়।’

আলাপকালে বিয়ানীবাজার বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মহিব্বুল ইসলাম খান পিএসসি বলেন, ‘সীমান্তে সার্বক্ষণিক তৎপর থাকে বিজিবি সদস্যরা। বিজিবি সদস্যদের নিয়মিত অভিযান আর নানা তৎপরতায় সীমান্তে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হ্রাস পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিক অনুপ্রবেশের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশী নাগরিক কর্তৃক অবৈধ অনুপ্রবেশ এর ঘটনা ঘটলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads